ন্যাড়ার প্রোজেক্ট প্রেজেন্টেশন সফর
কয়েকদিন আগেই ভার্সিটিতে হয়ে গেল Software Project Lab Final. তার পর পর অনেক শিক্ষার্থীদেরই নানারকম রিএ্যাকশন দেখেছি, নিজেও এসব করতাম। বেলতলায় গিয়ে বেলের বাড়ি খেতে খেতে শিখেছি কোনটা কি কারণে হয়। সেগুলোই শেয়ার করছি, যেন তোমাদের বেলতলায় আর না যাওয়া লাগে। রিএ্যাকশনগুলোর ভিতরে সিংহভাগ হলো:
- প্রেজেন্টেশনে স্যারেরা ইংরেজি বলতে বলে কেন?
- প্রেজেন্টেশন দিতে ভয় লাগে - কিছু বলতে পারি না। নিজেও জানি না কি বলেছি হরবর করে!
- প্রোজেক্টের কয়দিন আগেই ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেল। পুরা কোড আবার করা লাগছে
- প্রোজেক্টরে আমার এত সুন্দর রংচং ওয়ালা স্লাইড ঠিক মতো দেখাই গেল না। দেখা গেলে ফাডায়ালাইতাম
- এত সুন্দর কাজ করলাম, স্যাররা রিপোর্টে ধসায় দিছে। ইইইই :’(
উপরের সবগুলার জন্য এখন একটি কুইজ।
কোনটা কোনটার সমাধানের জন্য ট্যালেন্ট বা বুদ্ধি লাগে?
সঠিক উত্তর আমরা সবাই জানি। এর একটার জন্যও ট্যালেন্ট লাগে না। লাগে সতর্কতা, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম।
কথা বলা
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল স্কেলে কাজ করতে পারবে এমন মানুষ তৈরী করতে চাই। সেটার জন্যই একটা প্র্যাকটিস হিসাবে ইংরেজি বলতে বলা। অসংখ্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দেখেছি - ভয়াবহ ট্যালেন্টেড। কিন্তু বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না। লাভ কি ট্যালেন্ট দিয়ে যদি তুমি নিজের কথা অন্যদের বুঝাতেই না পারো? যদি দুইজন থাকে তোমার সামনে যারা সমান ট্যালেন্টেড - কিন্তু একজন কথাই বলে না - আরেকজন কমিউনিকেটিভ - কাকে তুমি কাজের জন্য নিবে?
প্রেজেন্টেশনে ভয় পাওয়া
একটা গোপন কথা শেয়ার করি। ছোটবেলায় আমি অনেক নার্ভাস হতাম কথা বলতে আসলে স্টেজে কোন কারণে। পরে যখন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে টেকনিকাল সেশন নিয়েছি, বা ন্যাশনাল হ্যাকাথনে স্টেজে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে ৫ মিনিটের নোটিশে, হাজার খানেক মানুষের সামনে কথা বলার আগে আমার একটু হলেও কেমন জানি লেগেছে। মজার বিষয়, কথা বলা শুরু করার পরে আর সেগুলোর কথা তো মনেই থাকে না - উল্টো বলতে মজাই লাগে। এটা পুরাপুরি অভ্যাসের এবং প্রস্তুতির ব্যাপার। অনেকেই আয়নার সামনে, নিজে নিজে বা বন্ধুদের সামনে প্র্যাকটিস করে, প্রস্তুতি নেয়। আমার যেখানেই, যত সময়ের জন্যই না কিছু বলা লাগে - আমি আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি, সময়টাও লক্ষ্য রাখি। যতখানি সময় আমার জন্য আছে - সেটার মধ্যেই যেন সব গুছিয়ে আনতে পারি তার জন্য এই টাইমড প্র্যাকটিস।
প্রোজেক্ট নাই হয়ে যাওয়া
কিচ্ছু বলার নাই। তোমাকে কেউ মানা করে নাই ব্যাকআপ রাখতে। নিজেকে মেইল করো, টীমের বাকিদের মেইল করো। ড্রপবক্স, গিট, বিটবাকেট - একশো যায়গা আছে এসব রাখার জন্য। যদি কোন কারণে কোড উধাও হয়ে যায় - সেটা পুরাপুরি তোমার গাফিলতির কারণে।
প্রেজেন্টেশন
কিছু কমন সেন্স ব্যবহার করা লাগে এটার জন্য।
- আগে থেকে ভালো কালার কনট্রাস্টের প্রেজেন্টেশন বানিয়ে রাখো। জঘন্য কালার কনট্রাস্ট হলো হালকা ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা রংয়ে লেখা দেয়া, বা গাড় ব্যাকগ্রাউন্ডে গাড় রংয়ের লেখা দেয়া।
- এত কষ্ট করে তৈরী করা প্রেজেন্টেশন আগে চেক করে নাও প্রোজেক্টরে কেমন আসবে
- সবসময় প্রেজেন্টেশনের মাল্টিপল ভার্সন তৈরী করবে। অনেক যায়গায় অফিস এর ভার্সন আলাদা থাকে। অনেক যায়গায় এক ওস এর বানানো স্লাইড আরেক ওএস এ ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু একটা পিডিএফ বানিয়ে রাখলে তো খুব সমস্যা থাকে না! আর ওয়েব ভার্সন তৈরী করে রাখলে তো কথাই নাই। তবে প্রোপাইটরি ফন্ট - মানে যেগুলো সকল ওএস এ থাকে না, যেমন calibri / cambria - সেগুলোর বদলে সবখানে আছে এমন ফন্ট ব্যবহার করো।
প্রেজেন্টেশনের কনটেন্ট নিয়ে অসংখ্য লেখা আছে অনেক যায়গায়। আমার খুব পছন্দের কয়েকটা হলো:
- 8-tips for an awesome powerpoint presentation
- 5 Tips For Better Typography In Your Slides
- 22 Flat Background Colors for Your Presentation
ডকুমেন্টেশন
যে কোম্পানি একটা প্রোপোজালের ডকুমেন্ট ঠিক মতো করে না, সে কাজটাও ঠিক মতো করবে না। কাজ করে টাকা নিয়ে যখন ঐ কোম্পানি উধাও হয়ে যাবে - তখন তার কাজ তো বুঝা লাগবে ডকুমেন্টেশন পড়েই! কাজেই - বাদ।
কোন একটা কারণে আমরা ডকুমেন্টেশন নিয়ে মাথাই ঘামাই না। ডকুমেন্টেশন এর গুরুত্ব আমরা সাধারণত যতখানি দেই, তার চাইতেও বেশি। পিরিয়ড। তুমি যে কাজটা করেছো - সেটা যদি তুমি ঠিক মতো রিপোর্টে প্রকাশ না করতে পারো - তাহলে পরে যখন আরেকজন তোমার রিপোর্ট পড়বে, সে বুঝবেও না তুমি কি অসাধারণ কাজ করেছো! বিভিন্ন যায়গায় প্রোজেক্ট প্রোপোজাল যাচাই বাছাই করতে যাই যখন - তখন বেশিরভাগ কোম্পানিও ধরা খায় এই যায়গায়। এক্ষেত্রে উপরে লেখা এই সহজ ফিলোসফিটা মানা হয়।
সামনে আরো লিখবো আশা করি এসবের উপরে :)