রিপোর্ট, রিপোর্টের ভুল এবং শিক্ষকের মাথার চুল
খোলাসা করেই বলি। শিক্ষার্থীরা যখন রিপোর্ট দেয় - তখন কিছু রিপোর্ট আছে যেগুলো দেখে মনে হয় বাধাই করে রাখি, কিছু মনে হয় হাল্কের মতো করে কুচি কুচি করে ছিড়ি। নিদেন পক্ষে লাল কালির কলম দিয়ে রক্তাক্ত করি।
তার সাথে নিজের মাথার চুল ছেঁড়ার ইচ্ছা তো আছেই। সেটা না করতে, আমার সহকর্মী শিক্ষকদের মাথার চুলের স্বার্থে এবং তোমাদের নাম্বার যেন দিতে পারি - সেই জন্যেই এই লেখা।
মজার বিষয়, এগুলো কখনোই ভুল লিখেছে বা কেউ কম জানে বলে মনে হয়নি আমার। মনে হয়েছে কারণ যেসব কাজ করেছে রিপোর্টে - সেগুলো গাফিলতি, কেয়ারলেসনেস, বা সোজা বাংলায় “দেবার আছে দিলাম রিপোর্ট। কি আছে গেবনে?” ভেবে সাবমিট করা। আবার এমনও হতে পারে যে এসব গাফিলতি, সেটা জানেই না! যাই হোক, কি সেগুলো?
১ - Plagiarism
অনেকে বলে রচনা চুরি। সোজা বাংলায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে অন্য কারো কিছু ব্যবহার করা বা ভাব দেখানো যেন লেখার ঐ অংশটা নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত। আমরা আবার ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি পেস্ট করতে খুব পছন্দ করি। সেটাও এর ভিতরে পরে।
বাঁচতে হলে
সহজ হিসাব। অন্য কারো কিছু আমি ব্যবহার করলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবো। কোটেশন মার্ক বা অন্য কোন ভাবে বুঝাবো এই অংশ আমার মগজ প্রসূত না। সাথে রেফারেন্স দিয়ে দিবো। আরো কিছু জানতে Stanford University এর পেজ দেখতে পারো।
২ - ফরম্যাটিং
এটা খুব মজার। যেমন:
- রিপোর্ট টেমপ্লেট দেয়া আছে। সেটা নিজের মনের খুশিমতো ফলো না করা
- রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেটায় Letter of Transmittal এ সিগনেচার (কষ্ট লাগলে টিপসই) না দেয়া (যেটার মানে আসলে রিপোর্ট জমা দেয়াই হয়নি!)
- কভার পেজে পেজ নাম্বার দেয়া
- বিভিন্ন পেজে বিভিন্ন রকমের রং বেরংয়ের ফরম্যাটিং ব্যবহার করা
- কপি পেস্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন পেজে নানা ফন্টের লেখা হয়ে যাওয়া
- কপি পেস্ট করতে গিয়ে ফুটনোটের 1 দেয়া, যেটা আসলে নাই
- কোন কারণে লিংক বা ইমেইল এ্যাড্রেস দেয়া আছে, সেটার রং আর নিচের আন্ডারলাইন না ফেলা
- রিপোর্টের পেজ সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে প্রতি হেডিং আর প্যারাগ্রাফের আশে পাশে কয়েক মাইল ফাঁকা রাখা
বাঁচতে হলে
মাথা খাটাও।
৩ - শর্টকাট
“It’s”, “wanna”, “&”, “I’ll” এমন শর্টকাট শব্দ নিষিদ্ধ ফরমাল রিপোর্টে। আর কোন কথা নাই।
৪ - অনাথ টেবিল এবং ছবি
রিপোর্টে আমরা ছবি এবং টেবিল দিতে বেশ পছন্দ করি। দৃষ্টিনন্দন হয়, ভিজুয়ালিজেশন করা যায়। কিন্তু রিপোর্টে এসব দেবার কিছু নিয়ম আছে। ছবি দিলে সেই ছবির একটা আইডেন্টিফাইং নাম্বার, একটা ক্যাপশন থাকা লাগবে। সেটার কথা রিপোর্টে কোথাও না কোথাও বলা রেফারেন্স করা লাগবে। তা নাহলে সেই ছবি বা টেবিল অনাথ, মূ্ল্যহীন এবং দৃষ্টিকটু! এই যেমন এই লেখায় একদম উপরে একটা ছবি আছে, সেটার রেফারেন্স (ছবি ১) এবং ক্যাপশন ও আছে, আবার লেখায় সেটা উল্লেখ করাও হয়েছে রেফারেন্স ধরে!
৫ - ভুলভাল শব্দ ব্যবহার
এখনো কেউ শক্ত শক্ত দাঁত ভাঙ্গা শব্দ ব্যবহারের জন্য নাম্বার দেয় বা দিয়েছে বলে শুনি নাই। অবশ্য নাম্বার কাটাও হয় না। কিন্তু কাটা হয় যদি ভুল যায়গায় ভুল শব্দ ব্যবহার করা হয়, তখন। উপরের ছবি ১ দ্রষ্টব্য :)
বাঁচতে হলে
যেই শব্দের মানে সঠিক জানো না, সেইটা ব্যবহার করো না!
এগুলোই একমাত্র না, আরো আছে, সামনে আরো লিখবো ধীরে ধীরে এসব নিয়ে আশা করি। সেটা হয়তো কারো কাজে লেগে যেতেও পারে। লাগলে জানতে চাই!
আর আমার সহকর্মীদের এমন আর কি কি দেখলে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করে, বা শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট দেখানো নিয়ে কি অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা জানতে চাই। আশা করি কমেন্ট, সেটা সাইটে বা ফেসবুকে যেখানেই হোক, পাবো। :)