আমি মোটামুটি বিশদ পরিমাণে ঘাটাঘাটি করেছি গত কয়দিন ধরে একটা ভালো টাস্ক ম্যানেজারের জন্য লিনাক্সে। অনেক কিছুই তো আছে, কিন্তু কোনটাই মনের মতো মিলছিলো না। দরকার ছিলো এমন একটা কিছু, যেটা
ফ্রি
প্রোজেক্ট অনুসারে টাইমার চালাতে দিবে
ওয়েবসাইটে স্ট্যাটিসটিকস দিবে
মোবাইলে সাপোর্ট দিবে এবং সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার,
অটোমেটিকালি স্ক্রিনশট নিয়ে আমার নিজের কাজ মনিটর করতে সাহায্য করবে
কিছুদিন আগে এন্ড্রিউ মুরের (কম্পিউটার সায়েন্স এবং রোবোটিকসের প্রফেসর + ডিন, কার্নেগি মেলনে আছেন ) একটা ইন্টারভিউ পড়লাম। সারসংক্ষেপ এমন:
কার্নেগি মেলন থেকে প্রায় সময়ই বিভিন্ন শিক্ষকরা ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যান। আপনি নিজেও গিয়েছিলেন গুগলে ফ্রড ঠেকানো এবং টার্গেটেড বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে। প্রায় সবাইই আবার ফেরত আসেন। অনেকে কখনোই আসে না। যেমন কিছুদিন আগেই আপনার ভার্সিটি থেকে প্রায় ৪০জন গবেষক এবং বিজ্ঞানী চলে গিয়েছেন Uber এ। ইন্ডাস্ট্রি যেখানে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে - সেখানে এভাবে চলে যাওয়া ঠেকাতে আপনার চিন্তা ভাবনা কি?
আমি অনেক দিন ধরেই লক্ষ্য করেছি – আমার আশে পাশে অনেকেই আছে যারা খুব তাড়াতাড়ি প্রোগ্রামিং রপ্ত করে ফেলতে পারে, নতুন জিনিষ শিখতে পারে। আমার ধারণা ব্যাপারটা বুদ্ধিমত্তার কিছু না। অনেক সময়ই দেখেছি, অনেক ছোট ভাই এসে বলে – ভাই – শিখতে পারছি না প্রোগ্রামিং। কি করলে শিখতে পারবো? তখন কিছু জিনিষ বলেছিলাম।
কয়দিন আগে Learn Python the Hard way বইয়েও দেখি আমার কথাগুলো, সাথে আরো অনেক কিছু বলা হয়েছে যেগুলো আমি ঐসব ভালো প্রোগ্রামারের ভেতরে লক্ষ্য করেছি। আমার ধারণা প্রোগ্রামিং শিখতে না পারা, বা খুব ধীর গতিতে শেখাটা মোটামুটি সাধারণ আমাদের মাঝে। সেজন্যই ঐ বই আর আমার চিন্তা মিলিয়ে এই লেখাটা। নিজেদের ভেতরে কিছু ছোট্ট ছোট্ট পরিবর্তন আনলেই প্রোগ্রামিং শেখা ডাল ভাত।
আমার কম্পিউটার ব্যবহার করার জীবন প্রায় এক যুগের মতোই হবে। খুবই সহজ সরল ব্যবহার। গান শোনা, গেম খেলা, ইন্টারনেট ফোরামে যাওয়া, একটু আধটু প্রোগ্রামিং শেখার চেষ্টা, ক্লিক করে আয় করার চেষ্টা (না না, ডুল্যান্সার না :D) ইত্যাদি। এর মাঝে অসংখ্য রকমের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। খারাপ, ভালো সবরকম মিলিয়ে বলতে পারি এসব অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আমার কম্পিউটার চালানোর ব্যাপারটাকে আরো নিরাপদ করেছে। দ্রুত শেখা ভালো, তার চাইতেও বেশি ভালো ভুল থেকে শেখা; যেন ভুল একবারই হয়।
ফেসবুক নিয়মিত ভাবে F8 ডেভেলপার কনফারেন্স আয়োজন করে, যেখানে তারা ভবিষ্যতে ফেসবুকের লক্ষ্য কি, তারা কিভাবে আগাচ্ছে, ডেভেলপার এবং ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন কি কি আসছে সে বিষয়ে জানায়। যেহেতু গোটা পৃথিবী জুড়ে অনেক আগ্রহী ব্যক্তি থাকলেও সবাইকে নিমন্ত্রন করা সম্ভব হয় না, তাই তারা বিভিন্ন দেশে সেই সময়ে Facebook F8Meetup আয়োজন করে, যেখানে F8 Developer Conference লাইভ স্ট্রিমিং করার পাশাপাশি লোকাল ডেভেলপার কমিউনিটিও ফেসবুকের বিভিন্ন প্রযুক, সেগুলোর প্রায়োগিক ব্যবহার এবং লোকালিটির সাপেক্ষে কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে। এ বছরের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় Facebook F8Meetup। আয়োজন করেছিলো SD Asia, GPHouse এ। প্যানেল স্পিকার হিসাবে সেখানে নিমন্ত্রিত হয়ে যাই আমি। আলোচনার বিষয় ছিলো “How to Make Better Apps in the Context of Bangladesh”।
সেখানে যা মূল আলাপ ছিলো, তা হচ্ছে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বেশিরভাগ অ্যাপ তৈরী হচ্ছে খুচরা হিসেবে। কিরকম খুচরা, তা আসলে গুগল প্লে স্টোরে বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত অ্যাপ (ক্লু: NSFW) দেখলেই বুঝা যায়। এটার মূল কারণ ডেভেলপার হিসাবে বা ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের এখনো মানসিক পরিপক্কতা আসেনি বললেই চলে। এ ধরণের অ্যাপগুলোও চলে বিজ্ঞাপনের উপরে ভিত্তি করে, তেমন কোন সার্ভিস দেয় না বলেই। কিন্তু পক্ষান্তরে এর মানে এই না যে সার্ভিস অ্যাপ বাংলাদেশে চলে না। চলে, খুব ভালো মতোই যে চলে - তার একটা খুব ভালো উদাহরণ GO! Traffic App. এখন সেটা থেকে উত্তরণের উপায় কি?
উপায় আসলে একটা নিজেদের হাতে। আমাদের ধীরে ধীরে মানসিকতা বদলাতে হবে, খুচরার বদলে ভালো সার্ভিস ভিত্তিক অ্যাপ তৈরী করা লাগবে। মজার বিষয়ে, এধরণের সার্ভিস অ্যাপগুলো সবচাইতে বেশি আসার কথাবাংলাদেশে বিভিন্ন যে অ্যাপ কনটেস্ট হয় সেগুলো থেকে। দুঃখজনক ভাবে বিজয়ী অ্যাপগুলো বাণিজ্যিক জগতে আসে খুব কম ক্ষেত্রেই। এর মূল কারণ হচ্ছে অ্যাপ গুলো তৈরী করা হয় প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য, বাণিজ্যিক জগতে ঢোকার জন্য না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাপগুলো - সেটা মোবাইল হোক আর ওয়েব - তৈরী করা হয় বিদেশের অ্যাপের ধারণার উপরে ভিত্তি করে। সেগুলোকে দেশীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাল্টানোও হয় না। কাজেই মানুষের সেগুলোতে আগ্রহও সেভাবে বিশেষ করে তৈরী হয় না। কিন্তু যদি সেই একি সার্ভিস অ্যাপগুলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য চিন্তা করে Look and Feel এর দিক দিয়ে পরিবর্তন করা হয়, যদি মানুষের কথা চিন্তা করে বানানো হয় - তাহলে অনেক বেশি পরিমাণে সেগুলো ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এছাড়াও F8 Meetup এ গ্রামীণফোন কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করছে, সেগুলোর সাথে কিভাবে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, সংষ্কৃতি, ক্রিকেট আর মুক্তিযুদ্ধকে সম্পৃক্ত করছে সে বিষয়ে কেস স্টাডি ভিত্তিক আলাপ হয়। রিলেট করে কথা বললে যে সেটা মানুষের কাছে বেশি পৌঁছায় - সেটাই স্বাভাবিক। সেটাই হবার কথা। যদিও ভাইরাল হবার রেসিপি যে কি, সেটা এখনো তারা বুঝার চেষ্টা করছেন। যেমন হুট করেই জুনায়েদের ভিডিওটা কিভাবে ভাইরাল হলো - সেটা কি বাই চান্স না কোন ফর্মুলা আছে - সেটাও চিন্তার বিষয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছে GObd এর COO - Farhan Rahman এর সেশনটা। ওখানে তিনি GObd কিভাবে ফেসবুকের Authentication kit ব্যবহার করবে, তাতে কি সুবিধা হবে সে বিষয়ে আলাপ করেন। GObd কে মূল ডেভেলপার কনফারেন্সেও ফিচার করা হয়েছে এবছরে।